মৃত্যুযুদ্ধে জয়ী হওয়া ফুটবলারের গল্প- মাহবুব হাসান তন্ময়
২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর, সেন্ট্রাল কোপেন হেগেনের ক্রিশ্চিয়ানিয়া কেঁপে উঠলো আগ্নেয়াস্ত্রের গর্জনে। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে বন্দুক যুদ্ধ শুরু হয়। প্রায় মিনিট দশেক ধরে চলা বন্দুকযুদ্ধে গুরুতর আহত হয় সতেরো বছরের এক কিশোর। একে একে চারটি গুলি বিদ্ধ হয় তার শরীরে। চলে মৃত্যুর সাথে চার মাসের যুদ্ধ। আর সেই যুদ্ধে জয়ী সেই কিশোর এখন বাংলাদেশ ফুটবলের অন্যতম আইকন।
আন্তর্জাতিক ফুটবলে প্রতিনিধিত্ব করা প্রথম প্রবাসী ফুটবলার তিনি। ২০১৩ থেকে যিনি লাল সবুজের মধ্যমাঠকে করেছেন আরো শক্তিশালী, তিনি জামাল ভূঁইয়া।
নয় বছর বয়সে ফুটবলার হওয়া স্বপ্নে বিভোর হওয়া জামাল ১৬ বছর বয়সেই প্রথমে চুক্তিবদ্ধ হন ডেনমার্ক তথা ইউরোপের অন্যতম ক্লাব এফসি কোপেনহেগেনের অ্যাকাডেমিতে। কিন্তু ঐ একটি ঘটনায় বদলে দেয় তার জীবন। শুরুর আগেই শেষ কোপেন হেগেনের স্বপ্ন।
স্বপ্নের দেশ ডেনমার্ক। বলা হয় স্ক্যান্ডানেভিয়ার সবচেয়ে সুখী দেশ এটি। ৫৭ লাখ মানুষের এ দেশে রাজধানী কোপেন হেগেন থেকেই উঠে আসা জামাল ভূঁইয়ার। সুন্দর ভবিষ্যতের খোঁজে বাবা ইনসান ভূঁইয়া ১৯৬০ সালে পাড়ি জমিয়েছিলেন এ দেশে। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে ছোট জামাল ভূঁইয়া। ব্যাংক কর্মকর্তা ও ঠিকাদার দুই বড় ভাইয়ের মতো জামালকে নিয়েও স্বপ্ন দেখেছিলেন বাবা মা। কিন্তু জামালের স্বপ্ন শুধুই ফুটবলকে নিয়ে।
সেই জামাল ভূঁইয়া এখন অনেক পরিণত। ২০০৯ থেকে ২০১১ পর্যন্ত ডেনিশ ক্লাব হ্যালারাপ আইকে তে খেলার পর ফিলিপাইন ক্লাব স্টালিয়ন্স এফসি তে খেলেন। মাঝে একবার চীনেও খেলেন। এরপর পাড়ি জমান বাংলাদেশে। ২০১৪ তে চুক্তিবদ্ধ হন শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবে। সে বছর সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকের ফুটবলার ছিলেন তিনি। এরপর ২০১৬ তে যোগ দেন শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রে। এখন খেলছেন সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে।
ফুটবল ক্যারিয়ারে দীর্ঘ একটা সময় সংগ্রাম করতে হয়েছে জামাল ভূঁইয়া কে। লাল সবুজের জার্সি গায়ে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্নটা দেখে এসেছিলেন সবসময়ই। কিন্তু বাস্তবে তা রূপ দিতে গিয়ে কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে অনেক। ২০১১ সালে তখনকার কোচ নিকোলা ইলিয়েভস্কির অধীনে ট্রায়াল দিতে বাংলাদেশে আসেন, কিন্তু টিকতে পারেননি সেবার। হাল ছাড়েননি, ২০১৩ তে আবার আসলেন আরো দুই প্রবাসী ফুটবলার রিয়াসাত ও আনন্দ রহমানের সাথে। বাকী দুজন না পারলেও ডাচ কোচ লুডভিক ডি ক্রুইফের আস্থা অর্জন করেন জামাল ভূঁইয়া।
২০১৩ সালে কাঠমান্ডু সাফে নেপালের বিপক্ষে অভিষেক হয় জামালের। যদিও সে ম্যাচে বাংলাদেশ ২-০ গোলে পরাজিত হয়। ১৯ আগস্ট ২০১৮ তে এশিয়ান গেমস ফুটবলে অতিরিক্ত সময়ে তার গোলে প্রথমবারের মতো কাতার অনূর্ধ্ব ২৩ দলকে হারায়। এর ফলে বাংলাদেশ এশিয়ান গেমস ফুটবলের দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলার সুযোগ পায়। তবে জাতীয় দলের হয়ে জামাল ভূঁইয়ার সবচেয়ে স্মরণীয় টুর্নামেন্ট হলো বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপের প্রথম আসর। সেবার ফাইনালে শেষ মুহূর্তের গোলে মালয়েশিয়ার কাছে বাংলাদেশ হারলেও পুরো টুর্নামেন্টে অসাধারণ পারফরম্যান্সের জন্য ম্যান অব দ্য টূর্ণামেন্ট নিবাচিত হন জামাল ভূঁইয়া।
মাইকেল লর্ডরাপ, বলা হয় ডেনমার্কের অন্যতম প্রতিভাবান ফুটবলার ছিলেন তিনি। ১৯৯৮ সালে বুটজোড়া তুলে রাখার আগে ইউরোপের প্রায় সব সেরা দলের হয়ে খেলেন তিনি। বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদ, আয়াক্স, জুভেন্টাস- এই সব দলের হয়েই তিনি লীগ শিরোপা জেতেন। ১৯৯২ এর ইউরো ফুটবলে ডেনমার্ককে শিরোপা জেতানো স্কোয়াডের অন্যতম সদস্য তিনি। ডেনমার্কের এই আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডারের সান্নিধ্যে ছিলেন জামাল ভূঁইয়া। এফসি কোপেন হেগেনের অ্যাকাডেমিতে তার ছেলের সাথে একই সঙ্গে খেলেছেন। আর এই লর্ডরাপই হলো জামাল ভূঁইয়ার আইডল।
জামাল ভূঁইয়া শুধু ফুটবলারই নন, একজন ধারাভাষ্যকারও। গত মৌসুমে লা লিগার দুইটি ম্যাচে ধারাভাষ্যে ছিলেন তিনি।
বাংলাদেশ ফুটবলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ২০১৮ সাল থেকে। তার অধীনেই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ফুটবল দল। ফুটবলের হারানো ঐতিহ্য ফেরাতে একটু একটু করে চেষ্টা করে চলেছেন। চলমান ২০২২ বিশ্বকাপ ফুটবল বাছাই পর্বে খুব ভালো কিছু করতে না পারলেও আর যাইহোক মাঠের পারফরম্যান্স খারাপ ছিল না। এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন কাতারের সাথে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ছিল চোখে পড়ার মতো, নিজেদের থেকে র্যাংকিং এ অনেক এগিয়ে থাকা ভারতের সাথে তাদের মাঠেই ড্র। সর্বোপরি আশা জাগানিয়া পারফরম্যান্স।
মৃত্যুযুদ্ধে জয়ী জামাল ভূঁইয়ার হাত দিয়ে বাংলাদেশ ফুটবলের সুদিন ফিরে আসুক- এই কামনায় রইল।
আন্তর্জাতিক ফুটবলে প্রতিনিধিত্ব করা প্রথম প্রবাসী ফুটবলার তিনি। ২০১৩ থেকে যিনি লাল সবুজের মধ্যমাঠকে করেছেন আরো শক্তিশালী, তিনি জামাল ভূঁইয়া।
নয় বছর বয়সে ফুটবলার হওয়া স্বপ্নে বিভোর হওয়া জামাল ১৬ বছর বয়সেই প্রথমে চুক্তিবদ্ধ হন ডেনমার্ক তথা ইউরোপের অন্যতম ক্লাব এফসি কোপেনহেগেনের অ্যাকাডেমিতে। কিন্তু ঐ একটি ঘটনায় বদলে দেয় তার জীবন। শুরুর আগেই শেষ কোপেন হেগেনের স্বপ্ন।
স্বপ্নের দেশ ডেনমার্ক। বলা হয় স্ক্যান্ডানেভিয়ার সবচেয়ে সুখী দেশ এটি। ৫৭ লাখ মানুষের এ দেশে রাজধানী কোপেন হেগেন থেকেই উঠে আসা জামাল ভূঁইয়ার। সুন্দর ভবিষ্যতের খোঁজে বাবা ইনসান ভূঁইয়া ১৯৬০ সালে পাড়ি জমিয়েছিলেন এ দেশে। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে ছোট জামাল ভূঁইয়া। ব্যাংক কর্মকর্তা ও ঠিকাদার দুই বড় ভাইয়ের মতো জামালকে নিয়েও স্বপ্ন দেখেছিলেন বাবা মা। কিন্তু জামালের স্বপ্ন শুধুই ফুটবলকে নিয়ে।
সেই জামাল ভূঁইয়া এখন অনেক পরিণত। ২০০৯ থেকে ২০১১ পর্যন্ত ডেনিশ ক্লাব হ্যালারাপ আইকে তে খেলার পর ফিলিপাইন ক্লাব স্টালিয়ন্স এফসি তে খেলেন। মাঝে একবার চীনেও খেলেন। এরপর পাড়ি জমান বাংলাদেশে। ২০১৪ তে চুক্তিবদ্ধ হন শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবে। সে বছর সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকের ফুটবলার ছিলেন তিনি। এরপর ২০১৬ তে যোগ দেন শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রে। এখন খেলছেন সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে।
ফুটবল ক্যারিয়ারে দীর্ঘ একটা সময় সংগ্রাম করতে হয়েছে জামাল ভূঁইয়া কে। লাল সবুজের জার্সি গায়ে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্নটা দেখে এসেছিলেন সবসময়ই। কিন্তু বাস্তবে তা রূপ দিতে গিয়ে কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে অনেক। ২০১১ সালে তখনকার কোচ নিকোলা ইলিয়েভস্কির অধীনে ট্রায়াল দিতে বাংলাদেশে আসেন, কিন্তু টিকতে পারেননি সেবার। হাল ছাড়েননি, ২০১৩ তে আবার আসলেন আরো দুই প্রবাসী ফুটবলার রিয়াসাত ও আনন্দ রহমানের সাথে। বাকী দুজন না পারলেও ডাচ কোচ লুডভিক ডি ক্রুইফের আস্থা অর্জন করেন জামাল ভূঁইয়া।
![]() |
Collected from FB |
২০১৩ সালে কাঠমান্ডু সাফে নেপালের বিপক্ষে অভিষেক হয় জামালের। যদিও সে ম্যাচে বাংলাদেশ ২-০ গোলে পরাজিত হয়। ১৯ আগস্ট ২০১৮ তে এশিয়ান গেমস ফুটবলে অতিরিক্ত সময়ে তার গোলে প্রথমবারের মতো কাতার অনূর্ধ্ব ২৩ দলকে হারায়। এর ফলে বাংলাদেশ এশিয়ান গেমস ফুটবলের দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলার সুযোগ পায়। তবে জাতীয় দলের হয়ে জামাল ভূঁইয়ার সবচেয়ে স্মরণীয় টুর্নামেন্ট হলো বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপের প্রথম আসর। সেবার ফাইনালে শেষ মুহূর্তের গোলে মালয়েশিয়ার কাছে বাংলাদেশ হারলেও পুরো টুর্নামেন্টে অসাধারণ পারফরম্যান্সের জন্য ম্যান অব দ্য টূর্ণামেন্ট নিবাচিত হন জামাল ভূঁইয়া।
মাইকেল লর্ডরাপ, বলা হয় ডেনমার্কের অন্যতম প্রতিভাবান ফুটবলার ছিলেন তিনি। ১৯৯৮ সালে বুটজোড়া তুলে রাখার আগে ইউরোপের প্রায় সব সেরা দলের হয়ে খেলেন তিনি। বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদ, আয়াক্স, জুভেন্টাস- এই সব দলের হয়েই তিনি লীগ শিরোপা জেতেন। ১৯৯২ এর ইউরো ফুটবলে ডেনমার্ককে শিরোপা জেতানো স্কোয়াডের অন্যতম সদস্য তিনি। ডেনমার্কের এই আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডারের সান্নিধ্যে ছিলেন জামাল ভূঁইয়া। এফসি কোপেন হেগেনের অ্যাকাডেমিতে তার ছেলের সাথে একই সঙ্গে খেলেছেন। আর এই লর্ডরাপই হলো জামাল ভূঁইয়ার আইডল।
জামাল ভূঁইয়া শুধু ফুটবলারই নন, একজন ধারাভাষ্যকারও। গত মৌসুমে লা লিগার দুইটি ম্যাচে ধারাভাষ্যে ছিলেন তিনি।
বাংলাদেশ ফুটবলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ২০১৮ সাল থেকে। তার অধীনেই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ফুটবল দল। ফুটবলের হারানো ঐতিহ্য ফেরাতে একটু একটু করে চেষ্টা করে চলেছেন। চলমান ২০২২ বিশ্বকাপ ফুটবল বাছাই পর্বে খুব ভালো কিছু করতে না পারলেও আর যাইহোক মাঠের পারফরম্যান্স খারাপ ছিল না। এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন কাতারের সাথে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ছিল চোখে পড়ার মতো, নিজেদের থেকে র্যাংকিং এ অনেক এগিয়ে থাকা ভারতের সাথে তাদের মাঠেই ড্র। সর্বোপরি আশা জাগানিয়া পারফরম্যান্স।
মৃত্যুযুদ্ধে জয়ী জামাল ভূঁইয়ার হাত দিয়ে বাংলাদেশ ফুটবলের সুদিন ফিরে আসুক- এই কামনায় রইল।
No comments