সিনে কথন- মাহবুব হাসান তন্ময়

মুহাম্মদ জাফর ইকবালের লেখা সব উপন্যাস দিয়েই চলচ্চিত্র নির্মাণ করা সম্ভব। সেটার আকার হতে পারে পৃর্ণদৈর্ঘ্য কিংবা টেলিফিল্ম, যেকোনো ধরনের। তবে এসব চলচ্চিত্রে যে ধরনের কাহিনীর প্রাধান্য থাকবে তা দিয়ে বাণিজ্যিক সিনেমা নির্মাণ সম্ভব নয়। কারণ তার লেখার বেশিরভাগ উপন্যাসের কাহিনীই কিশোর কেন্দ্রিক।
.
খুবই দুঃখজনক ব্যাপার, আমরা বাংলা সিনেমার ব্যাপারে যতটা উদাসীন তার চেয়ে দ্বিগুণ বলিউড, হলিউডের ব্যাপারে আগ্রহী থাকি। এর জন্য অবশ্য দায়ী এ দেশের নির্মাতারাই।খুবই নিম্নমানের চিন্তাভাবনা, সামগ্রিক ব্যাপারে স্টাডি না করেই সিনেমা নির্মাণ করছেন বেশিরভাগ পরিচালক। নায়কনির্ভর সিনেমা নির্মাণেই বেশি আগ্রহী আমাদের দেশের প্রযোজকগণ। কাহিনী প্রাধান্য সিনেমা নির্মাণের আধিক্য না থাকলে চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির ইতিবাচক পরিবর্তন কোনোভাবেই সম্ভব না। বাংলাদেশেও ভাল মানের চলচ্চিত্র নির্মাতা আছে; মোস্তফা সারোয়ার ফারুকী, যিনি কিনা ২০১৫ দক্ষিণ এশিয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার নির্বাচনে জুরি বোর্ডের একজন সম্মানিত সদস্য ছিলেন, তার পরিচালিত 'টেলিভিশন' সিনেমাটি অস্কারের বিদেশি বিভাগের জন্য মনোনীত হয়েছিল। অমিতাভ রেজা চৌধুরি, 'আয়নাবাজি' র নির্মাতা। তৌকির আহমেদ, যিনি তার পরিচালিত চারটি চলচ্চিত্রের জন্যই প্রশংসিত হয়েছেন। দারুচিনি দ্বীপের জন্য পেয়েছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, অজ্ঞাতনামা অস্কারে মনোনিত হয়েছিল। গিয়াসউদ্দিন সেলিম, মনপুরার নির্মাতা। তিনিও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী পরিচালক। তবে ব্যাপার টা হলো, উনারা যে ঘরানার সিনেমা বানাতে অভ্যস্ত, তাতে অর্থ লগ্নি করতে বেশিরভাগ প্রযোজকই আগ্রহী নন। এজন্য তাদের ক্যারিয়ারে নির্মিত সিনেমার সংখ্যাও কম, সর্বসাকুল্যে ১৪ টির মতো।

পরিচালক গেলো, প্রযোজক গেলে এবার আসি আরেকটি সংকট নিয়ে বলতে। স্ক্রিপ্ট রাইটার সংকট। সত্যি বলতে এই মুহূর্তে ইন্ডাস্ট্রিতে ভাল মানের স্ক্রিপ্ট রাইটার নেই বললেই চলে। কারণ বর্তমানে সবচেয়ে ব্যস্ত স্ক্রিপ্ট রাইটার হলেন আব্দুল্লাহ জহির বাবু, যার চিত্রনাট্যে নকলবাজির শেষ নেই। এবার আপনিই বলেন এই মানের রাইটারকে নিয়ে আপনি কেমন মানের সিনেমা আশা করেন।

এবার আসি কিং খান প্রসংগে। শাকিব খান, নিঃসন্দেহে তিনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসে অন্যতম সেরা অভিনেতা। কিন্তু এখনো হিরোইজম ব্যাপারটিই ফলো করে যাচ্ছেন, ২০ বছরেও মনে রাখার মতো সিনেমা খুব বেশি একটা করতে পারেন নি। নায়ক রিয়াজ তার সময়ে সব ধরনের সিনেমা করেছেন। বাণিজ্যিক চাহিদায় কমার্শিয়াল সিনেমায় যেমন অভিনয় করেছেন, সমান তালে কাজ করেছেন হুমায়ূন আহমেদের সিনেমায় , কাজ করেছেন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রে। এই ব্যাপারগুলোই শাকিব খানের মধ্যে অনুপস্থিত। তাছাড়া নায়িকা সিলেকশনেও আছে সমালোচনা। অপু বিশ্বাস অধ্যায় শেষে এখন চলছে বুবলির সাথে বিরক্তিকর অধ্যায়। এক্ষেত্রে খুব তাড়াতাড়ি তার নায়িকা সিলেকশনে বিচিত্রতা আনা প্রয়োজন।

আরিফিন শুভ, সিয়াম সিনেমা সিলেকশনে বেশ রুচিশীলতারই পরিচয় দেন। কিন্তু অভিনয়ে তাদের  উন্নতির জায়গা এখনো আছে। চঞ্চল চৌধুরি, ফজলুর রহমান বাবু কে নিয়ে মন্তব্য করার মতো আদৌ কোনো জায়গা নেই। তারা আছেন বলেই বছরে কয়েকটা মানসম্মত সিনেমা বাংলাদেশের দর্শকরা উপহার পায়।

একটা শাবনুর, একটা মৌসুমী, একটা পূর্ণিমার মতো অভিনেত্রী হয়তো আর আসবে না। বর্তমানে যারা নায়িকা আছেন তাদের একজনও তাদের অভিনয় নিয়ে দর্শক মুখে আলোচিত থাকেন না। বেশিরভাগই নিজেদের ব্যক্তিজীবনের বেশকিছু ইস্যু নিয়ে প্রায়সময়ই সমালোচিত থাকেন। তারপরও জয়া আহসান তার নিজস্বগুণে টিকে আছেন, কিন্তু ঢালিউডের চেয়ে তিনি টলিউডেই বেশি নিয়মিত। নতুনদের মধ্যে পূজাকে বেশ সম্ভাবনাময় লেগেছে।তবে কেবল শুরু, চরিত্র নির্ধারণে ভবিষ্যতে খুব ধারাবাহিক হতে হবে পূজাকে।

চলচ্চিত্র শিল্পকে এগিয়ে নিতে দর্শকদেরও কিছু দায়বদ্ধতা আছে। দর্শক হিসেবে আমাদের রুচিও কিন্তু খুব সুন্দর না, কোনো সিনেমায় আইটেম সং না থাকলে বেশিরভাগ দর্শকই বেলুনের মতো চুপসে যায়।

বাংলা চলচ্চিত্রে ভালমানের কলাকৌশলী আরো বেশি যুক্ত হোক। বাংলা চলচ্চিত্র এগিয়ে যাক সন্তর্পণে। 

No comments

Theme images by 4x6. Powered by Blogger.